আমার ইরাস্মুসে আবেদন
২০২২ এ GRE ও IELTS পরীক্ষা দেই। পরেরটায় আলহামদুলিল্লাহ ভালো ফলাফল আসলেও প্রথমটায় একদমই খারাপ করি। নিচে আমার শিক্ষা জীবনের ফলাফলের সারাংশ দেয়া হলঃ
এস এস সিঃ ৫.০০
এইচ এস সিঃ ৫.০০
ব্যাচেলরঃ ৩.৭০ ইউনিভার্সিটি অফ এশিয়া প্যাসিফিক থেকে
IELTS: 7.5 (L9, R8, W7, S6.5)
GRE তে খারাপ করার পর মানসিকভাবে ভেঙে পরি। যদিও আমার তখনকার উদ্দ্যেশ্য ছিল আমেরিকায় পি এইচ ডি প্রোগ্রামে আবেদন করা, কিন্তু ঐ পরিস্থিতিতে আমি আত্মবিশ্বাস রাখতে পারি নাই। কিছুদিন হাহুতাশ করার পর সিদ্ধান্ত নেই ইরাস্মুস প্রোগ্রামে আবেদন করবো। নভেম্বরের শেষে এই সিদ্ধান্ত নেয়ার পেছনে শুধু একটাই কারন ছিল, আমি পরের বছর আমেরিকায় আবেদন করার আগে একবার SOP লেখা এবং উচ্চ শিক্ষায় আবেদনের পুরো প্রক্রিয়ার একটা অভিজ্ঞতা নিতে চাচ্ছিলাম।
প্রথম ধাপেই আমি ইরাস্মুস প্রোগ্রামের তালিকা থেকে নিজের পছন্দসই ৫ টা নির্বাচন করি। ইরাস্মুসে সীমাহীন প্রোগ্রামে আবেদন করা গেলেও, বাস্তবে তা করা যায় না। কারন সবগুলো প্রোগ্রামই আলাদা বৈচিত্র্যের, তাই আলাদা SOP লিখতে হবে। প্রোগ্রাম নির্বাচনের ক্ষেত্রে আমি নিম্নোক্ত বিষয়গুলোতে গুরুত্ব দেইঃ
১। সব মাস্টার্স প্রোগ্রামই কোন নির্দিষ্ট বিষয়ে গুরুত্ব দিয়ে থাকে, যেমনঃ AI নিয়ে প্রোগ্রাম না করে, NLP কিংবা Medical AI নিয়ে প্রোগ্রাম বানায়। নিজের আগ্রহ এবং পূর্ববর্তী গবেষণার সাথে মিল থাকে এমন প্রোগ্রাম নির্বাচন করা উত্তম।
২। ইন্টার্নশিপ আছে নাকি নাই সেটাও খেয়াল করি। আমি ইন্টার্নশিপওয়ালা প্রোগ্রামে গুরুত্ব দেই বেশি, কারন এতে পরে চাকরি পেতে সুবিধা হবে বলে ধারনা করি।
৩। সাধারণত প্রোগ্রামের ওয়েবসাইটে এরা IELTS অথবা GRE নিয়ে কিছু বলে না। যদি বলে তবে আমি ঐ প্রোগ্রাম নির্বাচন করি, কারন IELTS এ ভালো করায় আমি ধরে নেই আমি অন্যান্য আবেদনকারীদের থেকে সামান্য হলেও এগিয়ে থাকবো (যদিও কতটুকু সত্য সেটা আমি জানি না, পুরোটাই আন্দাজ)।
এইসকল বিষয় বিবেচনায় আমি EDISS, LCT, SECCLO, GENIAL, MAIA প্রোগ্রামগুলোর জন্য প্রস্তুতি নেই। প্রস্তুতি হিসেবে শুরুতেই কি কি কাগজপত্র লাগবে, SOP এর জন্য কিছু প্রোগ্রাম আলাদা নির্দেশনা দেয়, সেগুলো টুকে নেই। Recommendation Letter আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ কিন্তু বিরক্তিকর বিষয়। আমার নির্বাচিত সব প্রোগ্রামেই ২ জনের সুপারিশ পত্র লেগেছিল। তাদেরকে আবেদনের সিদ্ধান্ত নেয়ার সাথে সাথেই অনুরোধ করে রাখি।
আমি শুরুতে একটি SOP লিখি শুধু EDISS প্রোগ্রামের জন্য। দেড় পৃষ্ঠার ঐ লেখায় প্রথম অনুচ্ছেদে নিজের কম্পিউটার বিজ্ঞানে আগ্রহ কিভাবে আসে তা বলি। তারপরের অনুচ্ছেদে ব্যাচেলরে নিজের পড়াশোনা ও ফলাফল ছোট করে বিবৃতি দেই, তারপর জানাই কিভাবে NLP তে আগ্রহ এলো। আরেকটা অনুচ্ছেদে লিখি চাকুরীজীবনে কিসব দায়িত্ব নিয়ে কাজ করেছি। সর্বশেষ অনুচ্ছেদে এই প্রোগ্রামের সাথে নিজের আগ্রহের সম্পর্ক এবং এই প্রোগ্রাম যে আমাকে সাহায্য করবে কর্মজীবনের উদ্দেশ্য সাধনে তা বলি।
তারপর এই SOP আমার বউ (উনিও বিদেশে উচ্চ শিক্ষায় গিয়েছেন) এবং আমার এক শিক্ষককে দেখাই। তাদের অনেক উপদেশের পর একটি গ্রহণযোগ্য খসড়া প্রস্তুত হয় এবং আমি সেটা অন্য প্রোগ্রামগুলোর জন্য পরিবর্তন করে নেই। এভাবে একমাস লাগিয়ে আমার SOP লেখা শেষ হয়। SOP একবার লিখেই শেষ করে দেয়া যায় না, যতবারই পড়ি ততবারই কিছু না কিছু হালকা পরিবর্তনের কথা মাথায় আসে। তাই SOP বেশ আগে থেকেই লেখা শুরু করা উচিত।
সুপারিশপত্র বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই শিক্ষক লিখে দেন। যদি নিজের লিখতে হয় সেক্ষেত্রে যতটা ব্যক্তিগত খাতিরের কথা লেখা যায় তত ভালো। খাতির মানে এই না যে উনি আপনাকে পছন্দ করতো সেটা লিখবেন, বরং শ্রেণীকক্ষে আপনার কি ধরনের কাজের জন্য আপনাকে উনি আপনাকে সুপারিশপত্র দিতে রাজি হয়েছে তা লিখবেন। আপনি শ্রেণীকক্ষে মনযোগী ছিলেন, কোন বিশেষ ল্যাব কিংবা এসাইনমেন্টে আপনার কাজ খুবই ভালো হয়েছিল এগুলা বলতে পারেন।
বেশিরভাগ প্রোগ্রামেই আপনার CV চাইবে, সেক্ষেত্রে কর্মজীবনের আর শিক্ষাজীবনের CV আলাদা হয় সেটা লক্ষ্য রাখবেন। CV তে যায়গা সঙ্কট হলে প্রজেক্ট/পেপারের এর বিবরণ সংক্ষেপিত করা যায়। আবেদনের শেষ সীমার বেশ আগেই আবেদন করার চেষ্টা করবেন যাতে সুপারিশদাতারা যথেষ্ট সময় পান।
২ মাস পর ফলাফল দিলে আমাকে দুই প্রোগ্রামে অপেক্ষমাণ তালিকায় রাখে। পরিশেষে LCT প্রোগ্রাম থেকে ডাক দেয়।
Enjoy Reading This Article?
Here are some more articles you might like to read next: